নিজেদের মাতৃভাষাকে স্বীকৃতির দাবিতে পুরুলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে পথ অবরোধ কুড়মি সমাজের।
পুরুলিয়া:-ছটি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রায় দেড় কোটি মানুষ যে ভাষায় কথা বলেন, তার স্বীকৃতি মেলেনি আজও।ভাষাটির নাম কুড়মালি।আর তাদের সেই কুড়মালি ভাষাকে স্বীকৃতির দাবি সহ একাধিক দাবিকে সঙ্গে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কুঁড়মী সমাজ এর ডাকে আজ আবারও ‘ডহর ছেঁকা’ কর্মসূচিতে এগিয়ে এলেন কুড়মি সমাজ।
জঙ্গলমহলের চার জেলা তথা পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলায় আজ সেই কর্মসূচিতে পথ অবরোধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন কুড়মি সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ।তবে শুধু এ রাজ্যের চার জেলাতেই নয় পড়শি রাজ্যের ঝাড়খণ্ড ও ওড়িষ্যাতেও একযোগে একাধিক যায়গায় একই দাবিতে আজ এই ডহর ছেঁকা’ কর্মসূচিতে এগিয়ে এলেন কুড়মি সমাজ।
জানা যায়, ১৯৩১ সাল পর্যন্ত কুড়মিরা উপজাতি তালিকাভুক্ত ছিলেন।কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের আমলেই কুড়মিদের এসটি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।পঞ্চাশের দশকে যখন নতুন করে এসটি তালিকা তৈরি হয়, তাতে ১৯১৩ সালে গঠিত দেশের ১৩ টি উপজাতির তালিকার মধ্যে ১২ টি উপজাতিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।যদিও বাদ পড়ে যায় কুড়মি সম্প্রদায়।গত ৪ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়ায় গিয়ে কুড়মি সমাজের নেতাদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন।জানা যায়, সেদিন মুখমন্ত্রী আলোচনা সাপেক্ষে কুড়মি সমাজের দাবিগুলি কেন্দ্রকে সুপারিশ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন।তবে কুড়মি সমাজের অভিযোগ, “এখনও পর্যন্ত রাজ্যের তরফ থেকে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করার ইঙ্গিত মেলেনি।তাই তারা আজ এই আন্দোলন শুরু করছে।”
জঙ্গলমহলের তিন জেলার সঙ্গে সঙ্গে পুরুলিয়া জেলাতেও এদিন এই কর্মসূচিতে জেলার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে ধামসা মাদল নিয়ে নিজেদের মাতৃভাষাকে স্বীকৃতির দাবি তথা কুড়মী জাতিকে পুনরায় তপশিলী উপজাতি অন্তর্ভুক্তিকরনের দাবীতে পথ পথ অবরোধের কর্মসূচিতে এগিয়ে এলেন কুড়মি সমাজ।তবে তফশিলি জাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দাবিতে কুড়মি সমাজের এই আন্দোলন নতুন নয়৷ দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন৷ আদিবাসী কুড়মি সমাজের মুখ্য উপদেষ্টা অজিতপ্রসাদ মাহাতো জানান, এদিনের কর্মসূচি থেকে তাঁরা কুড়মালি ভাষাকে অষ্টম তফশিলের অন্তর্ভুক্ত করা, সিএনটি অ্যাক্ট চালু করতে হবে৷
প্রসঙ্গত, এই আইন বলবৎ হলে আদিবাসীদের জমি শুধু আদিবাসীরাই কিনতে পারবে৷ এর ফলে বিভিন্ন কারণে আদিবাসীদের থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার যে অভিযোগ ওঠে, তার হাত থেকে রেহাই পাবেন আদিবাসীরা৷ এছাড়াও তাঁরা এদিনের কর্মসূচি থেকে একাধিক দাবি তুলেছেন৷অজিতপ্রসাদ মাহাতো জানান, আজকে আদিবাসী কুঁড়মী সমাজ ডহর ছেঁকার ডাক দিয়েছিল।যা আজ শান্তিপূর্ন ভাবে পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সফল হতে চলেছে।আমাদের যে দাবি গুলির জন্য আজ এই কর্মসূচি গ্রহণ করা সেগুলো হল, প্রথমেই কুঁড়মী জাতিকে আদিবাসী তালিকাভুক্ত করতে হবে।কুড়মালী ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম ভাষা হিসাবে অগ্রাধিকার দিতে হবে।এবং সিএনটি অ্যাক্ট পুরুলিয়াতে চালু করতে হবে।অবরোধের জেরে জঙ্গলমহলের একাধিক রাস্তায় যান চলাচল ব্যহত হচ্ছে৷ ভোগান্তির মুখে পড়েন বহু মানুষ৷ এদিকে কুড়মি সমাজের এই কর্মসূচি নিয়ে সতর্ক জঙ্গলমহলের চার জেলার পুলিশ-প্রশাসন৷ অবরোধের জেরে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকেও খেয়াল রাখছেন পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা৷